কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত
যে সকল পুষ্টি মানুষের দেহে প্রয়োজন তার প্রায় সবই কাঁঠালের মধ্যে আছে। এর জন্য বাঙালি পুষ্টির অভাব পূরণ করার জন্য কাঁঠাল খেয়ে থাকেন। শুধু তাই না কাঁঠাল পুষ্টির রাজা এবং গরিবের খাদ্য হিসেবে পরিচিত। কাঁঠাল কাঁচা, পাকা, খোসা, বীজ, শিকড় সব ভাবে খাওয়া যায়। এবং প্রতিটি স্তরেই পুষ্টির চমৎকার উৎস রয়েছে।
কাঁচা কাঁঠাল ও কাঁঠালের বিচি রান্না করে তরকারি বা হালুয়া অথবা ভর্তা হিসেবে খাওয়া হয়। আবার কাঁঠালের যেমন উপকারিতা আছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। নিম্নে কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।
পেজ সূচিপত্রঃ কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত
কাঁঠালের বিচির উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা
কাঁঠালের খোসার উপকারিতা সম্পর্কে
কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
কাঁঠালের যত গুণ
কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল এর বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus এবং ইংরেজিতে এর নাম Jackfruit কাঁঠাল বাংলাদেশের জন্মানো এমন একটি ফল যার প্রতিটি অংশ গুরুত্বপূর্ণ।
কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে
চলুন জেনে নিন কাঁচা ও পাকা কাঁঠালের স্বাস্থ্য উপকারিতা।পুষ্টিবিদরা বলেছেন কাঁঠাল পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং মানবদেহের জন্য প্রয়োজনের সব উপাদান রয়েছে। যেমন বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন -এ,ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি,ভিটামিন১,ভিটামিন২, রিভোফ্লাভিং, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, প্রোটিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাঙ্গানিস, কপার, আয়রন সহ নানা রকমের পুষ্টি ও খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। এ ছাড়া আমিষ, শর্করা ও বিভিন্ন রকম ভিটামিনের ভাণ্ডার রয়েছে এই কাঁঠালে। যেমন:
উপাদান: প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠালের শক্তি রয়েছে ৩৯৭ কিলোক্যালরি, খাদ্য আঁশ ২.০০ গ্রাম, চিনি ১৯.০৮গ্রাম, স্নেহ ০.৬৪গ্রাম, প্রোটিন ১.৭২ গ্রাম, ভিটামিন -এ ৫ মাইক্রগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ৬১ মাইক্রগ্রাম, লুটিন জিয়াক্সানথিন১৫৭ মাইক্রোগ্রাম, থায়ামিন(বি১) ০.১০৫ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাবিন (বি২) ০.৫৫ মিলিগ্রাম, নায়াসিন (বি৩) ০.৯২ মিলিগ্রাম,
প্যানটোথেনিক এসিড(বি৫) ০.২৩৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন (বি৬) ০.৩২৯ মিলিগ্রাম, ফোলেট(বি৯) ২৪ মাইক্রগ্রাম, ভিটামিন-সি ১৩.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-ই ০.৩৪ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.২৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৯ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.০৪৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২১ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪৪৮ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম, জিংক ০.১৩ মিলিগ্রাম ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে।
কাঁঠালে থাকা প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্লাস সুগার নিয়ন্ত্রণ করেও দেহকে সুস্থ রাখে।কাঁঠালে থাকা ভিটামিন-সি চুল, দাঁত ও দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও ক্যান্সার ও টিউমারের বিরুদ্ধে রোধ গড়ে তোলে।
কাঁঠালের থাকা ভিটামিন-এ রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস আলসার, পাইলস ও কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এবং বার্ধক্য ও উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের সহায়তা করে।কাঁঠালের রয়েছে পটাশিয়াম, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়।
কাঁঠাল রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিনএ এবং বিটা ক্যারোটিন। যা চোখে দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং দৃষ্টি শক্তি প্রখর করে।
কাঁঠালের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং বলিরেখা কমিয়ে সুন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। মুখে বলি রেখা পড়তে বাধা দেয়। এছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে সৃষ্টিকারী ফ্রি রেডিকেল প্রতিরোধ করতে লড়াই করে। যা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী।
কাঁঠালে থাকা শর্করা ও পটাশিয়াম শরিলের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখে। যা উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক প্রেসার কমিয়ে হার্ড ভালো রাখে।কাঁঠালের রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালোরি, এর জন্য কাঁঠাল খেলে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায় এবং শরীরের গরম অনুভুতি হয়।
কাঁঠালের প্রচুর পরিমাণে আশ থাকায় হজমের সমস্যা দূর করে যা হজম শক্তি বাড়ায়। পেট পরিষ্কার রাখে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এতে পেটের কোন সমস্যা হয় না।কাঁঠালে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হার মজবুত করে ও অস্থির ওপরোসিস রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।
কাঁঠালে আয়রন থাকে। যা রক্তের লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ায়। রক্তস্বল্পতা রোগীদের জন্য কাঁঠাল খুবই উপকারী। যা দেহের রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং শ্বেত রক্তকণিকা দূর করে।কাঁঠালে কোনো ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই। এবং ক্ষতিকর ফ্যাটের পরিমাণও কম হয়। তাই ওজন বাড়ার খুব একটা আশঙ্কা থাকে না। তাই তাই মোটা হওয়ারও চিন্তা থাকেনা।
টেনশন নার্ভাসনেস ও বদ হজ কমাতে কাঠাল ভূমিকা রাখে।দুগ্ধ দানকারী মা তাজা ও পাকা কাঁঠাল খেলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যা শিশুর বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরী।কাঁঠালে থাকে ম্যাঙ্গানিজ ও খনিজ উপাদান। যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যার কারণে ডায়াবেটিস বা অন্যান্য রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
কাঁঠালের থেকে ভিটামিন-বি ভিটামিন-সি হৃদরোগের ঝুকি কমায় এবং হৃদরোগের সকল সমস্যা দূর করে।মায়ের পুষ্টিতে প্রতিদিন ২০০ গ্রাম পাকা কাঁঠাল খেলে, গর্ভবতী মা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশু সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হবে। এবং শিশু সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিবে।
কাঁঠালের বিচির উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা
কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে ভিটামিন-বি১ ও ভিটামিন-বি ১২ এর ভালো উৎস। এছাড়া ও রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, থায়ামিন, নায়াসিন, লিগন্যান্ট, আইসো ফ্ল্যাভন এবং স্পেরোনিনের মত ফাইটো কেমিক্যালস। যা মানব দেহের জন্য উপকারী এবং এর ফাইবার ভিটামিন গুলো দেহের জন্য খুবই উপকারী।
কাঁঠালের বিচিতে প্রতি ১০০ গ্রামে শক্তি পাওয়া যায় ৯৮ ক্যালোরি। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রামে থাকে কার্বোহাইড্রেট ৩৮.৪ গ্রাম, প্রোটিন ৬.৬ গ্রাম, ফাইবার ১.৫ গ্রাম, চর্বি ০.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ০.০৫- ০.৫৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.১৩ -০.২৩ মিলিগ্রাম, আয়রন ১.২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম ও পটাশিয়াম ৪.০৭ মিলিগ্রাম।
কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে শর্করা যা, শক্তির উৎকৃষ্ট উৎস।কাঁঠালের বিচিতে প্রোটিন আছে ও স্নেহ জাতীয় পদার্থ রয়েছে। যা, মাংসপেশী গঠনে ভূমিকা রাখে।ফাইবার ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটের কারণে এর গ্লাইকোসামিক ইনডেক্স কম ফলে এটি ওজন না বাড়িয়ে জোগাড় করতে পারে অনেক এনার্জি ও শক্তি এবং শরীরকে রাখে স্লিম ও ফিট।
যে সমস্ত মানুষ মাছ-মাংস কম খায়,,তাদের জন্য সেই চাহিদা মেটাতে কাঠাল উৎকৃষ্ট খাবার যাতে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার প্রোটিন ও ফাইবার ও ভিটামিন। যা মানুষের মাছ-মাংসের চাহিদা পূরণ করে।
কাঁঠালের বিচির জীবাণুনাশক গুনও রয়েছে। এটি Escherichia coil i Bacillus megaterium ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর। এবং এতে থাকা বিশেষ উপাদান Jacklin এইডস রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নয়নে সফল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এটি বলি দেখা দূর করে এবং ত্বকের বিভিন্ন রোগ নিরাময় কার্যকর ভূমিকা রাখে এবং ত্বক রাখে মসৃণ ও সুন্দর।কাঁঠালের বিচি খেলে চুলের আগা ফাটা সমস্যা দূর করে এবং চুল পড়া কমিয়ে চুল রাখে সিল্কি ও সুন্দর ও কোমল।
কাঁঠালের বিচিতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম কেবল হাড়ের জন্য উপকারী নয়, রক্ত সংকোচন প্রক্রিয়া সমাধানের ভূমিকা রাখে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে।কাঠালের বিচিতে রয়েছে প্রোটিন। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় কাঁঠালের বিচি খেতে পারেন, ফলে শরীরের রক্ত সরবরাহ বাড়বে। এছাড়া কাঁঠালে থাকা কপার থাইরয়েড গ্রন্থি ভালো রাখে।
কাঁঠালের বিচিতে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলো ক্যান্সার এবং বার্ধক্যর প্রভাব সৃষ্টিকারী উৎপাদন গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বা কমিয়ে রাখে বা দমিয়ে রাখে।
কাঁঠালের খোসার উপকারিতা সম্পর্কে
কাঁঠালের খোসা দিয়ে তৈরি করা হয় জেলি। কারণ এতে ভিটামিন-সি ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় উপাদন যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাঁঠালের খোসা দিয়ে তৈরি জেলিতে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের মত খনিজ উপাদান গুলো শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপ ও হৃদ স্পন্দন ঠিক রাখতে অনেকটা সাহায্য করে থাকে।
এছাড়াও এই জেলি রয়েছে, বিটা ক্যারোটিন। যা সেল ড্যামেজ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এবং ড্যামেজ সেলকে সম্পূর্ণরূপে নতুন ছেলে রূপান্তর করে।
কাঁঠালের শিকড়ের উপকারিতা
যাদের হাঁপানি সমস্যা রয়েছে, তাদের কাঁঠালের শিকড় সিদ্ধ করে তা গ্রহণ করলেই হাঁপানি সমস্যা সহজে নিরামি করতে সাহায্য করে।
কাঁঠালের শিকর জ্বর ও ডায়রিয়া জনিত রোগের জন্য খুব ভালো উপকার করে থাকে। এটি পরিষ্কার করে পরিষ্কার পানি দিয়ে খেতে হবে।তাছাড়াও চর্ম রোগের সমস্যা সমাধানে খুবই উপকারী কাঁঠালের শিকর।
কাঁঠালের অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। কাঁঠালে যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি কাঠালের অপকারিতা ও রয়েছে। এখানে আলোচনা করব কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে কাঁঠালের অপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো জেনে নিন:
যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের কাঁঠাল খাওয়ার কিছুটা বিধি নিষেধ আছে। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি তাদের কাঁঠাল না হয় ভালো। এছাড়াও অধিক পরিমাণে কাঁঠাল খেলে তা বদহজম হতে পারে।চলুন তাহলে দেখে নিই কাঁঠাল খাওয়ার পর কি কি ফল খাওয়া যাবেনা।
- দুধ :কাঁঠাল খাওয়ার পর দুধ খেলে পেট ফুলে যেতে পারে এবং তাকে ফুসকুড়ি আবার সাদা সাদা দাগের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার এলার্জি সমস্যা ও দেখা দিতে পারে।
- পেঁপে: কাঁঠাল খাওয়ার পরে আপনি যদি পেঁপে খেতে চান, তাহলে মুখে বা শরীরে এলার্জি চুলকানি সমস্যা দেখা দিতে পারে বা ফোসকা উঠতে পারে।
- ঢেঁড়স: কাঁঠাল খাওয়ার পর যদি ঢেঁড়স খেয়ে থাকেন তাহলে এসিডিটি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে বুক ব্যথা ও পেট ব্যথা হতে পারে।
- পানি: কাঁঠাল খাওয়ার পর পানি খেলে আপনার মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কারণ, কাঁঠাল খাওয়ার পর পানি খেলে দুইটি একত্রে বিষক্রিয়ার কাজ করে থাকে।
ইনফবারী ২৪নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url